কক্সবাজার প্রতিনিধি ::
বগুড়ায় চারজন ইর্ন্টান চিকিৎসককে বহিস্কারের ইস্যুকে কেন্দ্র সারাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি চলছে। তার ধারবাহিকতায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসাও কর্মবিরতি অব্যাহত রেখেছেন। শনিবার থেকে গতকাল রোববার রাত পর্যন্ত তাদের কর্মবিরতি চলছিল। এর মধ্যে দুপুরে অবস্থান ধর্মঘটও করেন তারা। অবস্থান ধর্মঘটে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের হুঁশিয়ারি দেন- বগুড়ার চার ইন্টার্ন চিকিৎসকের উপর জারি করা বহিস্কারাদেশ তুলে না নিলে লাগাতার আরো কঠোর কর্মসূচী দেবে বলেও হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।
এদিকে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা কর্মরিবতিতে থাকায় হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা মারাত্মভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সেবা না পেয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছে রোগিরা। অনেক রোগী সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়েছে। বাধ্য হয়ে অনেক রোগীকে প্রাইভেট হাসপাতালে স্থানাস্তর করেছে স্বজনেরা। এতে বিপাকে পড়েছেন গরীব রোগিরা। কারণ টাকার অভাবে তারা ব্যয়বহুল প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসরা করাতে পারছে না। গতকাল দুপুরে সদর হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে খোঁজ নিয়ে এই তথ্য জানা গেছে।
হাসপাতালের পাঁচতলার সার্জারি বিভাগের এক রোগী স্বজন এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘দুর্ঘটনায় আহত তার রোগির অত্যন্ত সঙ্কটাপন্ন অবস্থা। এই মুহূর্তে সার্বক্ষণিক চিকিৎসকের তত্ত্বাবধান দরকার হলেও তা পাওয়া যাচ্ছে না। শনিবার দিনে জরুরী চিকিৎসক এসে একবার দেখে গেছে। রাতে একবার দেখে যায়। শুনেছি ইন্টার্ন চিকিৎসেকরা কর্মবিরতিতে রয়েছে। তাই এই অবস্থা।’
অভিযোগ উঠেছে, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ‘সমর্থন’ জানিয়ে হাসপাতালের অন্যান্য চিকিৎসকেরাও সেবা দিতে কার্পণ্য করছেন। অনেক ক্ষেত্রে কেউ কেউ প্রকাশ্যে সেবা দিতে অস্বীকার করছেন। এতে রোগী ও রোগীর স্বজনেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
মহেশখালী থেকে আসা এক মহিলা রোগীর স্বজনেরা জানান, মহিলা রোগিটির জরায়ুর জরুরী অপারেশন দরকার। এই জন্য বিকালে সিআইসি ক্লিনিকে ডা. শিরিন আকতার জাহানকে দেখিয়ে সদর হাসপাতালে অপারেশন করার আবেদন করা হয়। কিন্তু ডা. শিরিন আকতার জাহান রোগীর স্বজনদের জানান- ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলছে। তাই সদর হাসপাতালে অপারেশন করা যাবে না। অপারেশন করতে হলে প্রাইভেট হাসপাতালের মাধ্যমে করতে হবে। এতে খরচ পড়ে ১০ গুণ।
সচেতন লোকজন মনে করছেন, চারজন ইন্টার্ন চিকিৎসকের বহিস্কারের কারণে সারাদেশের লাখ লাখ রোগীর চিকিৎসা সেবা বন্ধ রয়েছে। এটা ইন্টার্ন চিকিৎসকের অত্যন্ত বাড়াবাড়ি। পৃথিবীর সব থেকে স্পর্শকাতর ক্ষেত্র হাসপাতাল আর রোগীর জীবন। কিন্তু চারজন ইন্টার্ন চিকিৎসকের জন্য লাখ লাখ রোগী সেবা বন্ধ রাখা অতি জঘন্য। এটা মানবতার চরম অধ:পতন। সামান্য বিষয় নিয়ে কর্মবিরতির মতো ঘটনা চিকিৎসকরা প্রায় করে থাকেন। মানবতার স্বার্থে এটা কাম্য নয় বলেন মনে সচেতন মহল।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার সোসাইটির সভাপতি কমরেড গিয়াস উদ্দীন বলেন, ‘পৃথিবীর সব ক্ষেত্রে অন্যায় আছে। অন্যায় হলে অবশ্যই অন্যায়ের প্রতিবাদ হবে। তবে যৌক্তিক পর্যায়ে হতে হবে। ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা বলছেন, তাদের সহকর্মীদের অন্যায়ভাবে বহিস্কার করা হয়েছে। তা ঠিক মানলাম। এটার জন্য সমাধান হচ্ছে মন্ত্রণালয় বা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যাওয়া। কিন্তু তারা করছে কর্মবিরতি। এটা কখনো যৌক্তিক হতে পারে না। তারা সামান্য বিষয়টি নিয়ে লাখ লাখ রোগীর জীবনকে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছেন- এটা অত্যন্ত অন্যায় কাজ।’
জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. আরিফ বলেন, ‘চিকিৎসকদের উপর নানাভাবে অন্যায় বেড়ে গেছে। সম্প্রতিক ঢাকা মেডিকেল ও ফরিদপুরে দুটি ঘটনায় চিকিৎসক সমাজ অত্যন্ত অপমানিত হয়েছে। তার কোনো ব্যবস্থা এখনো নেয়া হয়নি। এর মধ্যে বগুড়ায় এক মহিলা ইন্টার্ন চিকিৎসককে ইভটিজিং করা হয়েছে। তার প্রতিবাদ করায় উল্টো চারজন বহিস্কার করা হয়েছে। এভাবে অন্যায় হওয়ায় আমাদের পিট দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাই প্রতিবাদে নামতে বাধ্য হয়েছি।’ তবে কর্মবিরতে রোগীদের সেবা ব্যাহত হচ্ছে না বলে দাবি করেন ডা. আরিফ।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবু সাঈদ বলেন, ‘ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতে রোগীদের সেবা ক্ষেত্রে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। তবে সেবা ব্যাহত হচ্ছে না। আমরা সেটা ওভারকাম করে নিচ্ছি।’
প্রসঙ্গত, বগুড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগির স্বজন ও এক ইন্টার্ন চিকিৎসকের অপ্রীতিকর ঘটনা কেন্দ্র করে ওই হাসপাতালের চারজন ইন্টার্ন ডাক্তারকে তাঁদের ট্রেনিং থেকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করার প্রতিবাদের সারাদেশে সাথে একাত্মতা ঘোষনা করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ইন্টানরা কর্মবিরতি পালন ও অবস্থান ধর্মঘট পালন করছে।
পাঠকের মতামত: